ভবদহের অভিশপ্ত জলবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে কৃষকরা বিল খুকশিয়ার ডায়ের খালে বাঁধ নির্মাণ করে পলি অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। কৃষকের স্বার্থে জলাবদ্ধ ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য শ্রীহরি নদী ও ডায়ের খালের সংযোগস্থলে বাঁধ নির্মাণ শেষে ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেটের পলি অপসারণের কাজ চলছে। জলাবদ্ধ পানি নিষ্কাশন হলেই বিল অভ্যন্তরের ৪০ হাজার বিঘা জমির ধান, সবজি, মাছের ঘের ও মানুষের বাড়িঘর এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্ষা পাবে।
ভবদহ সংলগ্ন কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার ২৭টি বিলের পানি নিষ্কাশন হয় কেশবপুরের ডায়ের খাল দিয়ে। কিন্তু শ্রীহরি নদী ও ডায়ের খালের সংযোগস্থলে ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেটের আগে ও পিছে ৬ কিলোমিটার পলি জমে বিলের তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। যে কারণে বিলের পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি আর জলাবদ্ধ পানি উপচে এলাকার ফসলের ক্ষেত, মানুষের বাড়ি ঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে। জলাবদ্ধ ফসল, মৎস্য ঘের ও বাড়িঘর রক্ষার জন্য কেশবপুরের
সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা শ্রীহরি নদী ও ডায়ের খালের সংযোগস্থলে বাঁধ নির্মাণ করে ৮ ব্যান্ড স্লুইস গেটের আগে পিছে ৬ কিলোমিটার জমে থাকা পলি এস্কেভেটর মাধ্যমে অপসারণের কাজ শুরু করেছেন। প্রতি ঘণ্টা ৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাসমান এস্কেভেটর দিয়ে এ পলি মাটি কাটা হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণ ও পলি অপসারণের জন্য চেয়ারম্যান অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন। ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই পলি অপসারণের কাজ শেষ হবে বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ধারণা করছেন।
এরপর নির্মিত বাঁধে কাঠের কপাট লাগানোর পর শুরু হবে জলাবদ্ধ পানি নিষ্কাশন। শ্রীহরি নদীতে ভাটার সময় বাঁধের কপাট খুলে দেয়া হবে। আর জোয়ারের সময় কপাট বন্ধ করা হবে। এ জন্য একজন শ্রমিকও রাখাও হয়েছে। এলাকাবাসীর মতে, এতে ২৭ বিলের জলাবদ্ধ পানি নিষ্কাশন হতে প্রায় দু’মাস সময় লাগবে। সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বলেন, ভবদহ সংলগ্ন ২৭ বিলের ৪০ হাজার বিঘা জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে বিল খুকশিয়ার ডায়ের খালের পলি অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ কাজে ব্যয় হবে প্রায় ১৮ লাখ টাকা।
এলাকার কৃষকের স্বার্থে নিজ উদ্যোগেই কাজ করে যাচ্ছি। পলিতে ভরাট হওয়া ডায়ের খালের পলি অপসারণে পার্শ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর, দূর্বাডাংগা, নেহালপুর, শ্যামকুড় ও খানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সহযোগিতা নেয়া হবে। কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সী আছাদুজ্জামান বলেন, ভবদহ সংলগ্ন শ্রীহরি নদী ও খাল পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। এগুলি সংস্কারের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ না হলে কিছু করার নেই।
তবে সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উদ্যোগে ডায়ের খালের পলি অপসারণের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনে চেষ্টা কতটুকু সফল হবে তা বলা যাবে না। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, ডায়ের খালের পলি অপসারণের কাজ পরীক্ষামূলকভাবে করা হচ্ছে। যদি এতে সফলতা পাওয়া যায় তাহলে বৃহত্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। ওই কাজে চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।